ডেনমার্ককে রুখে দিয়ে টিকে রইল অস্ট্রেলিয়া

খেলার ৭ মিনিটেই পিছিয়ে পড়ল তারা। কিন্তু ওখান থেকেই পাল্টা আঘাতের শুরু। মরিয়া অস্ট্রেলিয়ার উপায় ছিল না আক্রমণের পর আক্রমণে জয়ের জন্য খেলা ছাড়া। প্রধমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই পেনাল্টিতে গোল পেয়ে যায়। ১-১ এর সমতা নিয়ে বিরতির পর ফিরে আরো গোছানো-আক্রমণাত্মক তারা। কিন্তু ডেনমার্ক শেষ ১৬ ম্যাচে অপরাজিত দল। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কখনো হাত থেকে ছুটে গেলেও আবার ফিরিয়ে এনেছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে সামারায় দ্বিতীয়ার্ধে সকারুসরা দারুণ চাপ দিয়ে খেলেও গোল পেল না। ডেনিশরাও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। তাতে গ্রুপ ‘সি’ এর এই খেলার ফলাফলে নক আউট পর্বে যাওয়ার উত্তেজনাটা বাড়ল। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের তিন খেলার প্রথমটি ১-১ গোলেই ড্র। বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় এই গ্রুপে ফ্রান্স নামছে পেরুর বিপক্ষে।

প্রথম ম্যাচে ডেনমার্ক ১-০ গোলে হারিয়েছে পেরুকে। ওদিকে ফ্রান্সকে কঠিন সময় উপহার দিয়েও অস্ট্রেলিয়া হেরেছিল ২-১ গোলে। সেই কারণে এই ম্যাচে ডেনিশরা জিতলেই নক আউট পর্বে এক পা দিয়ে রাখতো। অস্ট্রেলিয়া বাদ পড়ার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াতো। এই গ্রুপের বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে নিচের দল। ৩৬ নম্বরে তারা। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা ডেনমার্ক আছে ১২ নম্বরে। বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সকারুসদের জন্য। শেষ পর্যন্ত ৩৮ মিনিটে অধিনায়ক মাইল জেডিনাকের স্পট কিকের গোলে নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। ৭ মিনিটে ডেনিশদের হয়ে গোলটি করেছিলেন ক্রিস্টিয়ান এরিকসন। টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকল ডেনমার্ক। এই গ্রুপে দুই ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন ৪। সবার উপরে। ফ্রান্সের এক ম্যাচে ৩। অস্ট্রেলিয়ার ২ ম্যাচে হলো ১। পেরুর এক ম্যাচে কোনো পয়েন্ট নেই।

২০১৫ সালে তিনি টানা তৃতীয়বারের মতো এরিকসন জিতেছিলেন ডেনমার্কের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। আরো অনেক পুরস্কার ২৬ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ঝুলিতে। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে গ্রুপ ‘সি’ থেকে পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের পেছনে ছিলেন এই এরিকসন। তার অ্যাসিস্টেই জয়সূচক গোলটি এসেছিল। কোচ বলেছিলেন, এরিকসনের এই বিশ্বকাপে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। বৃহস্পতিবার নিজেদের ম্যাচের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেনমার্ককে উৎসবে মাতালেন সেই তিনি। ৭ মিনিটের মাথায় বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক গোলে ১-০ এর লিড এনে দেন দলকে। দুরন্ত শুরু।

আগের ম্যাচে হারায় এটা বাঁচা-মরার লড়াই অস্ট্রেলিয়ার জন্য। কিন্তু ডেনমার্কের নাম্বার টেন শুরুতেই বড় ধাক্কা দিয়েছেন। বিপজ্জনক এরিকসন দেশের হয়ে ৮০তম ম্যাচে ২৩তম গোলটি করেছেন। আর সেটি দেখতেও লেগেছে ভালো। আক্রমণে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্স। যে ডিফেন্স ফ্রান্সের বিপক্ষে দারুণ লড়েছিল। জরগেনসেন বলটি পেয়ে দেখেছেন এগিয়ে আছেন এরিকসন। তার দিকে দ্রুত বাড়িয়েছেন বক্সের উপরের দিকে। হাওয়ায় সামান্য ভেসে থাকা বলে এরিকসনের হাফ ভলি ঠেকাতে পারেননি ম্যাট রায়ান। দারুণ মান দেখিয়েছেন এরিকসন।

এবারের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১১টি গোল করেছিলেন এই মিডফিল্ডার। ইউরোপের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলের মালিক এরিকসন বাছাই পর্বে। ১৬ গোল করেছিলেন পোল্যান্ডের রবার্ত লেভাদোস্কি। আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো করেছিলেন ১৫ গোল। রোনালদো এর মধ্যে ২ ম্যাচে ৪ গোল করে গোল্ডেন বুট জয়ের লড়াইয়ে এগিয়ে। এরিকসনের গোলের খাতা খুলল মাত্র। ২০১০ এ বিশ্বকাপের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় ছিলেন এরিকসন। এবার সেরাদের কাতারে ওঠার লড়াই তার। ক্লাব ফুটবল খেলেন ইংল্যান্ডের টটেনহাম হটস্পারে।

এটি যখন অস্তিত্বের লড়াই অস্ট্রেলিয়ার জন্য তখন শুরুতেই পিছিয়ে পগার পর তাদের গুছিয়ে উঠতে সময় লাগে। খেলার শুরু থেকে ডেনিশদের লাগছিল ভালো। আর শুরুতেই এরিকসন লিড এনে দেওয়ার পর মাঝমাঠে আরো সুসংহত লাগছিল তাদের। এর মাঝে আক্রমণে উঠলেও শেষ টানতে পারছিল না অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু ভাগ্যদেব তাদের দিকে তাকান। ৩৮ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় সকারুসরা। অধিনায়ক মাইল জেডিনাক স্পট কিকে মিস করেন না। আগের ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি পেনাল্টি থেকেই করেছিলেন তিনি। এবারও ডাইভ দেওয়া স্মেইকেলকে ফাঁকি দিয়ে তার নেওয়া কিকে বল গিয়ে জড়ায় জালে। ১-১ এ সমতার স্বস্তি অস্ট্রেলিয়ার। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১২ পেনাল্টি কিক নিয়ে ১২টিতেই গোল করলেন জেডিনাক। এবারের লাইফলাইনটা অস্ট্রেলিয়া পেয়ে যায় লেকি রোজের হেড ইউসুফ পলসেন হাত দিয়ে ঠেকালে। ভিএআর নিশ্চিত করে ওটি হ্যান্ডবল। হলুদ কার্ড দেখতে হয় পলসেনকে। পরের ম্যাচে খেলা হবে না এই ডেনিশের। অবশ্য ভিএআরে এই পেনাল্টি দেওয়া নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থেকে গেল।

এই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন এরিকসন। কিন্তু তাকে কড়া মার্কিংয়ে রাখতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। যে কারণে জরগেনসেনদের দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের শেষটা চমৎকার হচ্ছিল না। সিস্টো মাঠে তাদের প্রাণ হয়ে লড়ছিলেন। এই অর্ধে অস্ট্রেলিয়াই আরো চেপে ধরে ডেনিশদের। প্রথমার্ধে ডেনমার্ককে সেরা মনে হলেও নিঃসন্দেহে দ্বিতীয়ার্ধে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

লেকি-রজিচে অস্ট্রেলিয়া বেশ আক্রমণ শানিয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছিল। কিন্তু ডেনমার্কের ডিফেন্সও দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ানদের ফিনিশিংয়ের সুযোগ দেয়নি তারা। খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দুয়েক আগে লেকির একটি বিপজ্জনক চেষ্টাও রুখে দেন শেষ মানুষটি, গোলরক্ষক স্মেইকেল। রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ১৯ বছরের উইঙ্গার ড্যানিয়েল আরজানিকে বদলি হিসেবে নামিয়ে চেষ্টা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ইরানে জন্ম নেওয়া ১৯ বছরের এই খেলোয়াড়ও ব্যবধান তৈরি করতে পারেননি। অভিজ্ঞ টিম কাহিল বদলি হিসেবেও সুযোগ পেলেন না।

তবে এই ম্যাচে আসলে যে ফল হওয়ার কথা ছিল তাই হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেবেন নিশ্চয়ই। ডেনিশরা খাতাকলমে অনেক এগিয়ে থাকলেও দিনের খেলায় অস্ট্রেলিয়া ভারসাম্য এনে ফেলেছিল। আর তাতেই রাশিয়া বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে খেলার আশা ওই খাতাকলমেই এখনো বেঁচে থাকলো তাদের।